আজ দেশব্যাপী প্রার্থনা ও গণমিছিলের ডাক
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীসহ সারা দেশে গতকাল বৃহস্পতিবার বৃষ্টির মধ্যেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও আইনজীবী, অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যোগ দেন। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ছাত্র-জনতা নিহতের প্রতিবাদে এদিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষকের ওপর পুলিশি
সবার নিঃশর্ত মুক্তি, কারফিউ প্রত্যাহার, সকল ধরনের হয়রানি ও ব্লকেড দিয়ে ছাত্রদের গ্রেপ্তার না করা, অবিলম্বে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখাসহ সব হত্যাকা-ের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।- সূত্র: আমাদের সময়
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গতকাল সাম্প্রতিক সময়ে চলা নির্যাতন-নিপীড়নের স্মৃতিচারণ করেন। এছাড়া চিত্রাঙ্কন, দেওয়াল লিখন, মৌন মিছিল, প্রতিবাদী গানের আসর, মুকাভিনয়সহ বিভিন্নভাবে তারা নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন এবং আন্দোলনকালে নিহতদের নায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের বীরোচিত আত্মত্যাগ তুলে ধরেন। কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাবরেটরিসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি বাধার মুখে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে আটকের খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আজ শুক্রবার দেশব্যাপী প্রার্থনা, কবর জিয়ারত ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল কর্মসূচি পালন করা হবে। গতকাল আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তার দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শুক্রবার সারাদেশের মসজিদে-মসজিদে বাদ জুমা দোয়া, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উপসনালয়ে প্রার্থনা, আন্দোলনকালে নিহতদের কবর জিয়ারত এবং ছাত্র-জনতার গণমিছিলঅনুষ্ঠিত হবে।
বিবৃতিতে সব মসজিদের ইমাম-খতিবদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়- আপনারা জাতির এমন ক্রান্তিলগ্নে চুপ থাকবেন না। মসজিদের মিম্বার থেকে প্রতিবাদের ঘোষণা দিন। মাদ্রাসার শিক্ষক ও
ছাত্রদের প্রতি আহ্বান, এই দুঃসময়ে ঘরে বসে না থেকে বাদ জুমা মসজিদ ও মাদ্রাসা থেকে ছাত্র-জনতার গণমিছিল বের করুন।
আবদুল কাদের বলেন, আমাদের প্রাণের জন্মভূমি আজ এক মহাসংকটকাল অতিক্রম করছে। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা
হামলা চালিয়ে ছাত্র-জনতার রক্তে রাজপথকে রঞ্জিত করছে। তারা শিক্ষকদেরও লাঞ্ছিত করেছে। গ্রেপ্তার ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে। পাড়া-মহল্লায় রেইড দিয়ে গণগ্রেপ্তারের নামে গ্রেপ্তার বাণিজ্য চালাচ্ছে। গতকাল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় সমন্বয়কসহ অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল কেন্দ্রীয় ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে ছেড়ে দিলেও এখনো ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আক্তার হোসেন, সমন্বয়ক আরিফ সোহেলসহ অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে কারাগার ও রিমান্ডে নির্যাতন করছে। এ ছাড়া ঢাবি শিক্ষক শেহরীন আমিন ও নুসরাত জাহান চৌধুরীর গায়েও হাত তুলেছে পুলিশ। এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
গতকাল রিমেম্বার আওয়ার হিরোজ কর্মসূচিকে ঘিরে নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ছাত্র-জনতা নিহতের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক শেহরীন আমিনের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে গতকাল সকালে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
সমাবেশে ঢাবি আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, এই হত্যাকা-ের বিচার এ সরকার করবে না। কারণ সরকার নিজেই খুনি। আর খুনের বিচারকে অন্য খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। আমাদের ছাত্রদের অনিরাপদ রেখে আমরা শান্তিতে বসে থাকব না। আমাদের অস্তিত্বে আঘাত হানা হয়েছে। বাংলাদেশের বুকে গুলি করা হয়েছে। খুনের বিচার না করতে পারলে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে না পারলে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ এবং ঢাবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও মিছিল করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লোকপ্রশাসন বিভাগ। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাবির অপরাজেয় বাংলার সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের ‘হত্যা’ ও আন্দোলন পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের ওপর গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষক সমাবেশের ব্যানারে দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ঢাবিসহ একাধিক সরকারি ও বেসরিকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশ।
জাবির সমাবেশে শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে শিক্ষকরাও যোগ দেন। বক্তারা আন্দোলনের জাবি সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী লিয়নসহ সব শিক্ষার্থীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেন।
রাবিতে দুই শিক্ষার্থী আটক : পুলিশের বাধায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচি পালন করতে পারেননি শিক্ষার্থীরা। এ সময় দুই শিক্ষার্থীকে আটক করা হলে শিক্ষকরা থানায় গিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনেন। এ ছাড়া দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের বিভাগীয় প্রতিনিধি আমজাদ হোসেন ও সমকাল পত্রিকার ক্যাম্পাস প্রতিনিধি অর্পন ধরকে মারধর করা হয়।
ববি সমন্বয়কসহ ১২ শিক্ষার্থী পুলিশি হেফাজতে : কোটাবিরোধী আন্দোলনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সুজয় শুভসহ ১২ শিক্ষার্থীকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ববির প্রধান গেট থেকে প্রবেশের সময় তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের হেফাজতে নেওয়ার কথা জানায় পুলিশ। তারা হলেন অর্থনীতি বিভাগের ভূমিকা সরকার, অ্যাকাউন্টিং বিভাগের মাহমুদুল হাসান সজীব, পরিবেশ ও মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের তমাল, ইংরেজি বিভাগের অনিকা সিঁথি, সিবাত আহমেদ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সুজন মাহমুদ, অর্থনীতি বিভাগের শেখ ইমন প্রমুখ।
কারাগারে চট্টগ্রামের সমন্বয়ক শরীফ : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের অন্যতম সম্বয়ক আদনান শরীফকে গত বুধবার রাতে নগরের বাকলিয়া ডিসি রোডের বাসা গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গতকাল কোটা সংস্কার আন্দোলনে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পাঁচলাইশ থানার দুই মামলায় তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। শরীফ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিস বিভাগের শিক্ষার্থী এবং দারুল উলুম মাদ্রাসার সমন্বয়ক।
এদিকে সকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ময়মনসিংহ নগরীর টাউন হল মোড়ে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা, এ ছাড়া বিকালে ঢাবি ছাত্র এবং ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শামসুজ্জামান অমির মুক্তির দাবিতে ময়মনসিংহে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ১২টায় হবিগঞ্জ শহরের টাউন হলের সামনে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী স্টুডেন্টস অব হবিগঞ্জ ব্যানারে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা, বেলা ১১টার দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মৌনমিছিল এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এ ছাড়া বিকালে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বঙ্গবন্ধু মুক্ত মঞ্চের সামনে বিকালে দেয়াল লিখন ও প্রতিবাদী নৃত্যের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টি উপেক্ষা করে নোয়াখালীর মাইজদীর সুপার মার্কেটসংলগ্ন প্রধান সড়কে দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত নোয়াখালীতে কর্মসূচি পালন করেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। আবু সাঈদসহ সব হত্যাকা-ের বিচার, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের দাবিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিকালে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষকরা।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন চট্টগ্রাম ব্যুরো, বরিশাল ব্যুরো, রংপুর ব্যুরো, ঢাবি প্রতিবেদক, নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার; নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ; নিজস্ব প্রতিবেদক, কুড়িগ্রাম; হববিগঞ্জ প্রতিনিধি, ভোলা প্রতিনিধি, রাবি প্রতিনিধি, খুলনা প্রতিনিধি, ইবি প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি, নোয়াখালী প্রতিনিধি।