কিয়ামতের আলামত বিষয়ে মুমিনের যা করণীয়

  • ইসলাম ডেস্ক : কেয়ামতের আলামতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, তীব্র ঠান্ডা ও দাবদাহসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে। এতে করে মাঠঘাট যেমন ফসলহীন হয়ে পড়বে; প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসলের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবার মরু অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির কারণে ঘটবে এর উল্টোটা। বন্যার কবলে পড়ে বিপর্যস্ত হবে আরব অঞ্চল। পানির ছোঁয়ায় শুষ্ক মরুভূমি হয়ে যাবে সবুজ অরণ্যে।

নির্দিষ্ট ও নির্ধারিত সময়ের জন্য পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ তায়ালা। নির্ধারিত সময়ের পর আবাার তিনি পৃথিবী ধ্বংস করে দেবেন। পৃথিবীর ধ্বংসের দিন বা ক্ষণকে কিয়ামত বলা হয়। কিয়ামত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে-

‘যখন শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে- একটি মাত্র ফুঁক; তখন জমিন ও পর্বতমালাকে উড়ানো হবে। মাত্র একটি আঘাতে সব চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। ফলে সে দিন মহাপ্রলয় সংঘটিত হবে। আসমান বিদীর্ণ হয়ে যাবে। ফলে সেদিন তা হয়ে যাবে দুর্বল বিক্ষিপ্ত। ফেরেশতারা আসমানের বিভিন্ন প্রান্তে থাকবে। সেদিন তোমার রবের আরশকে আটজন ফেরেশতা তাদের ঊর্ধ্বে বহন করবে। সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে। তোমাদের কোনো গোপনীয়তাই গোপন থাকবে না। (সূরা আল হাক্কাহ, আয়াত : ১৩-১৮)।

কেয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার আগে বেশ কিছু আলামত প্রকাশ পাবে। যার মাধ্যমে বোঝা যাবে যে, কেয়ামত নিকটবর্তী। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, তারা শুধু এই অপেক্ষাই করছে যে, কেয়ামত অকস্মাৎ তাদের কাছে এসে পড়ুক। বস্তুত কেয়ামতের লক্ষণসমূহ তো এসেই পড়েছে। সুতরাং কেয়ামত এসে পড়লে তারা উপদেশ গ্রহণ করবে কেমন করে?’ (সূরা মুহাম্মদ, আয়াত : ১৮)

কিয়ামতের আলামত নিয়ে হাদিসে বিস্তারিত আলোচনা করছেন রাসূল সা.। শুধু একটি বা নির্দিষ্ট কোনো আলামত প্রকাশের মাধ্যমে কিয়ামত সংঘটিত হবে না। বরং একাধিক আলামত প্রকাশের পর কিয়ামত সংঘটিত হবে। কিয়ামতের আলামত বিষয়ে অনেক আলোচনা রয়েছে। একজন মুমিনের উচিত আকীদার অন্যান্য বিষয়ের মতো এ বিষয়ে কোরআন ও হাদিসের নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করা। এগুলোর ব্যাখ্যা ও প্রকৃতি জানা আমাদের দায়িত্ব নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ বিষয়ক ব্যাখ্যা ভিত্তিহীন ও অন্তহীন বিতর্ক সৃষ্টি করে।

যেমন- হাদিসে যে ভূমিধ্বসের কথা বলা হয়েছে তা কি তুরস্কের ভূমিকম্প? ইরানের ভূমিকম্প? জাপানের সুনামি? না তা ভবিষ্যতে ঘটবে? কবে ঘটবে? অথবা: ইয়াজূজ-মাজূজ কারা, তারা কি তাতার? চেঙ্গিশ খানের বাহিনী? চীন জাতি? অন্য কোনো জাতি? কোথায় তারা থাকে? তারা বের হয়েছে না বের হবে?

অথবা- দাজ্জাল কে? ইসরায়েল রাষ্ট্র? আমেরিকা? দাজ্জাল কি বের হয়েছে? না ভবিষ্যতে হবে? কখন তার আবির্ভাব ঘটবে? কিয়ামতের আলামত বিষয়ক এ জাতীয় প্রশ্ন বা গবেষণার নামে সময় নষ্ট করে দুনিয়া ও আখিরাতে মুমিনের কোনোই লাভ হয় না, তবে ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয়। ইবাদত, দাওয়াত, উপার্জন, আল্লাহর হক, বান্দার হক ইত্যাদি জরুরি কাজ ফাঁকি দিতে মুমিনকে এমন অকারণ বিতর্কে লিপ্ত করে শয়তান।

মুমিনের দায়িত্ব সাধারণভাবে বিশ্বাস করা যে, কিয়ামতের আগে এ সকল আলামত দেখা যাবে। এ সকল বিষয়ে কোরআন ও সহিহ হাদিসে যা বলা হয়েছে সবই সত্য। যখন তা ঘটবে তখন মুমিনরা জানবেন যে কিয়ামত ক্রমান্বয়ে এগিয়ে আসছে। এগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা আল্লাহই জানেন। এর ব্যাখ্যা জানার দায়িত্ব মুমিনকে দেওয়া হয়নি। মুমিনের দায়িত্ব দুনিয়া ও আখিরাতে কাজে লাগার মতো জ্ঞানচর্চা ও গবেষণা করা।

কোরআন-হাদীস অনুসন্ধান করে মানুষের প্রায়োগিক জীবনের সমাধান দেওয়ার জন্য গবেষণা করতে নির্দেশ দেয় ইসলাম। চিকিৎসা, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল ইত্যাদি সকল মানব-কল্যাণ বিষয়ক গবেষণার নির্দেশ দেয় ইসলাম।

এ সকল বিষয়ে গবেষণা-অনুসন্ধান মানুষকে একটি নিশ্চিত ফলাফল লাভের পথে নিয়ে যায়। কিন্তু গায়েবি বিষয় নিয়ে গবেষণার নামে অকারণ বিতর্ক কোনো ফলাফল দেয় না। মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা.-কে ইয়াজূজ-মাজূজ বা দাজ্জাল বলতে কী বুঝিয়েছেন সে বিষয়ে হাজার বছর এভাবে গবেষণা নামের প্রলাপ-বিলাপ ও বিতর্ক করেও নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে না।

ইমাম আবূ হানীফা উল্লেখ করেছেন যে, এ সকল বিষয়ে শুধুামত্র সহিহ হাদিসের উপর নির্ভর করতে হবে। এটিই আহলুস সুন্নাতের মূলনীতি। শুধু সহিহ হাদিসের উপর নির্ভর করা, দুর্বল ও জাল বর্ণনা বর্জন করা এবং সহীহ হাদিসে বর্ণিত বিষয়গুলি অপব্যাখ্যা না করে সরল অর্থে বিশ্বাস করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংশ্লিষ্ট

Back to top button