কীভাবে করবেন ই-পাসপোর্ট
পাসপোর্ট হলো একজন নাগরিকের জাতীয়তা ও পরিচয় প্রমাণকারী একটি সরকারি নথি। এটি আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য অপরিহার্য। পাসপোর্টে ধারকের নাম, ছবি, জন্ম তারিখ, ঠিকানা, জাতীয়তা, পাসপোর্ট নম্বর, ইস্যু ও মেয়াদ উল্লেখ থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশ ই পাসপোর্ট এর যুগে প্রবেশ করেছে। প্রত্যেক নাগরিকের জন্য মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এর পরিবর্তে ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়ে থাকে।
ই–পাসপোর্টের জন্য এখন ঘরে বসে নিজেই নিজের আবেদন করতে পারবেন। ই–পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে কী লাগে, ই–পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম ও খরচ, কত দিনে পাওয়া যায়, চলুন ই–পাসপোর্ট সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-
পাসপোর্টের প্রকারভেদ-
সাধারণ পাসপোর্ট: সকল সাধারণ নাগরিকের জন্য।
অফিসিয়াল পাসপোর্ট: সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য।
ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্ট: কূটনীতিকদের জন্য।
জরুরী পাসপোর্ট: জরুরী পরিস্থিতিতে দ্রুত ভ্রমণের জন্য।
পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে-
বাংলাদেশি আবেদনকারীদের জন্য ৪৮ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে সাধারণ (২১ কর্মদিবস) ফি ৪ হাজার ২৫ টাকা, জরুরি (১০ কর্মদিবস) ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা ও অতীব জরুরি (২ কর্মদিবস) ফি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, জরুরি ফি ৮ হাজার ৫০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা।
৬৪ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা, জরুরি ফি ৮ হাজার ৬২৫ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১২ হাজার ৭৫ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি ৮ হাজার ৫০ টাকা, জরুরি ফি ১০ হাজার ৩৫০ টাকা ও অতীব জরুরি ফি ১৩ হাজার ৮০০ টাকা। সব ফির সঙ্গে যুক্ত হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। ১৮ বছরের কম এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সী আবেদনকারীরা কেবলমাত্র ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট পাবেন। অতি জরুরি আবেদনের ক্ষেত্রে পুলিশ প্রতিবেদন সঙ্গে আনতে হবে।
ই-পাসপোর্টের সুবিধা-
ই-পাসপোর্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, এর মাধ্যমে ই-গেট ব্যবহার করে খুব দ্রুত ও সহজে ভ্রমণকারীরা যাতায়াত করতে পারবেন। ফলে বিভিন্ন বিমানবন্দরে ভিসা চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না। এর মাধ্যমেই ইমিগ্রেশন দ্রুত হয়ে যাবে। ই-গেটের নির্দিষ্ট স্থানে পাসপোর্ট রেখে দাঁড়ালে ক্যামেরা ছবি তুলে নেবে। থাকবে আঙুলের ছাপ যাচাইয়ের ব্যবস্থাও। সব ঠিক থাকলে তিনি ইমিগ্রেশন পেরিয়ে যেতে পারবেন। কোনো গরমিল থাকলে জ্বলে উঠবে লালবাতি। কারও বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকলে, সেটিও জানা যাবে সঙ্গে সঙ্গে।
ই-পাসপোর্ট আবেদন যেভাবে করবেন-
পাসপোর্ট এর জন্য অনলাইনে বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ে সরাসরি গিয়ে আবেদন করা যায়। পাসপোর্ট আবেদন করার কয়েকটি ধাপ রয়েছে প্রত্যেকটি ধাপ অতিক্রম করার পরে আপনার পাসপোর্ট আবেদন সফলভাবে সম্পন্ন হবে, এরপরে পাসপোর্ট প্রসেসিং এ চলে যাবে, নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে বিভিন্ন ভেরিফিকেশন ও যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াকরণ শেষে আপনার পাসপোর্টটি প্রস্তুত হয়ে যাবে। প্রথমে জেনে নিতে হবে পাসপোর্ট আবেদন করার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। অনলাইনে অ্যাকাউন্ট খুলে সহজেই ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যায়।
ই পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম
বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট অনলাইন পোর্টালে যান https://www.epassport.gov.bd “অ্যাপ্লাই অনলাইন Apply Online -এ ক্লিক করুন। নির্দেশাবলী অনুসারে ফরম পূরণ করুন। ফি পরিশোধ করুন। ছবি তোলার ও আঙুলের ছাপ দেওয়ার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিন। নির্ধারিত তারিখে বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করুন। পাসপোর্ট ডেলিভারি স্লিপ সংগ্রহ করুন। এভাবেই প্রত্যেকটি ধাপে ধাপে আপনি আপনার ই পাসপোর্ট আবেদন সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন। অনলাইনে আবেদন করার ক্ষেত্রে নিজের কয়েকটি ধাপ আপনাকে অতিক্রম করতে হবে এবং সাবধানতার সাথে।
প্রথম ধাপ-
• প্রথমে ভিজিট করুন ই পাসপোর্ট পোর্টালে, এরপরে ক্লিক করুন অনলাইন আবেদন / Apply Online লিংকে
• আপনার বর্তমান ঠিকানার জেলা শহর এবং থানার নাম নির্বাচন করে ক্লিক করুন।
দ্বিতীয় ধাপ-
• ই-পাসপোর্টের মূল ফরমটি সাবধানতার সাথে পূরণ করুন।
• নিশ্চিত করুন যে আপনার সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য সঠিকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
• ফরম পূরণ শেষ হলে, “সাবমিট” করুন।
তৃতীয় ধাপ-
• আপনার পছন্দের মেয়াদ এবং পাসপোর্টের পৃষ্ঠা সংখ্যা অনুযায়ী ফি পরিশোধ করুন।
• আপনি যেকোনো ব্যাংকের ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে অনলাইনে টাকা জমা দিতে পারেন।
• বিকল্পভাবে, আপনি অনুমোদিত পাঁচটি ব্যাংকের যেকোনো একটিতে টাকা জমা দিয়ে জমা স্লিপের নম্বর সংগ্রহ করতে পারেন।
• সমস্ত পেমেন্ট সম্পন্ন করার পর, “ফাইনাল সাবমিট” ক্লিক করুন।
চতুর্থ ধাপ-
•আপনার সকল তথ্য পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সার্ভারে আপলোড করা হবে।
•আপনার আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
•আবেদন শেষে আপনাকে একটি ফর্ম প্রিন্টেবল আকারে দেওয়া হবে একই সাথে নিয়ে নিম্নোক্ত •প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে জমা দিতে হবে। সাথে •আপনার বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করতে হবে।
পাসপোর্ট করতে যে সমস্ত কাগজপত্রের দরকার হয়-
অনলাইনে ই-পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ ও পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করে ছবি তোলা ও আঙুলের ছাপ দেওয়ার জন্য তারিখ নেবেন। এরপরে পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার জন্য অবশ্যই নিম্নোক্ত ডকুমেন্টগুলো আপনাকে নিয়ে যেতে হবে-
➤ অনলাইন আবেদন কপি
অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন ফরমের মুদ্রিত কপি
পাসপোর্ট ফি পরিশোধের রিসিট
➤ ঠিকানার প্রমাণ
১. বিদ্যুৎ বিলের কপি (যে বাসায় থাকেন)
২. অন্যান্য বিকল্প ঠিকানার প্রমাণ
৩. গ্যাস বিল
৪. পানি বিল
৫. টেলিফোন বিল
৬. সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ
৭. ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সনদ
৮. পরিচয়পত্র
➤ পরিচয়পত্র:
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
- ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি
- পুরাতন পাসপোর্টের কপি (যদি থাকে)
➤ অন্যান্য:
- ২ কপি সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড)
- অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে:
- জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি
- পিতা/মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
উল্লেখিত সকল কাগজপত্রের মূল কপি সাথে নিয়ে যাবেন।
কাগজগুলো সাথে নিয়ে যাওয়ার পরে আপনাকে সিরিয়ালি অপেক্ষা করতে হবে আপনার বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করার জন্য, বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করার শেষে আপনাকে একটি পাসপোর্ট ডেলিভারি স্লিপ প্রদান করা হবে, এটি পাসপোর্ট যখন রিসিভ করবেন তখন দরকার হবে।
মনে রাখবেন
সকল কাগজপত্রের সঠিক ও আপডেটেড তথ্য থাকতে হবে।
মূল কাগজপত্রগুলোর সাথে ফটোকপি মিলে যাচ্ছে কিনা তা ভালো করে দেখে নিন।
অনলাইন আবেদন ফরমে দেওয়া তথ্যের সাথে সকল কাগজপত্রের তথ্যের মিল থাকতে হবে।
আবেদন জমা দেওয়ার পর তথ্য সংশোধন করার কোন সুযোগ নেই।
ভুল তথ্যের জন্য আপনার আবেদন বাতিল হতে পারে।
আবেদন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে হয়ে গেলে আপনার পাসপোর্টটি প্রসেসিং এ চলে যাবে, এরপর পুলিশ ভেরিফিকেশন, পাসপোর্ট অধিকতর ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হওয়ার পরে আপনার পাসপোর্ট প্রিন্ট হবে। সবশেষে আপনার পাসপোর্ট আপনার নির্ধারিত আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ডেলিভারি করা হবে, আপনাকে মোবাইলের মাধ্যমে এসএমএসে জানানো হবে আপনার পাসপোর্ট ডেলিভারি হয়েছে কিনা অথবা অনলাইনে পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করার মাধ্যমে জানতে পারবেন। এরপরে আপনি আপনার পাসপোর্ট ডেলিভারি স্লিপ জমা দিয়ে আপনি আপনার পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।