লীড নিউজ

ঘুরে আসুন নৈসর্গিক লীলা ভূমি হরিনঘাটা-লালদিয়া

বিশেষ প্রতিবেদক || নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লীলাভূমির নাম হরিনঘাটা-লালদিয়া। প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্যের আঁচলে ঢাকা বাংলাদেশের দক্ষিণের এই লীলাভূমিতে পর্যটকরা মুগ্ধ হন, প্রেমে পড়েন শীতল প্রকৃতির। বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার এ অন্যতম দর্শনীয় স্থানটিতে উপভোগ করা যায় দেশের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনের সৌন্দর্য, বন্যপ্রাণী ও সাগরের বিশাল জলরাশি, পাশাপাশি দেখা যায় সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের মোহনীয় দৃশ্য। চোখে পড়ে সৈকতে নানা প্রজাতির পাখির নির্বিঘ্নে বিচরণ। এ ছাড়া সৈকতে ঘুরে বেড়ানো লাল কাঁকড়ার দলও প্রায়শই তৈরি করে দেখার মতো এক দৃশ্য।

বনাঞ্চলটি পাথরঘাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর, বিষখালী ও বলেশ্বর নদের মোহনায় গড়ে উঠেছে। সুন্দরবনের চেয়ে আকৃতিতে বড় প্রজাতির মায়াবি চিত্রল হরিণের বিচরণস্থল হওয়ায় এই বনের নামকরণ হয়েছে হরিণঘাটা বনাঞ্চল। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এ বন নানান গাছপালায় সমৃদ্ধ। কেওড়া, গরাণ, গেওয়া প্রভৃতি শ্বাসমূলীয় গাছ বনের প্রধান বৃক্ষ। এ ছাড়া বনে রয়েছে হরিণ, বানর, বন বিড়াল, গুইসাপ, মেছো বাঘ, ডোরা বাঘ, সজারু, শিয়াল, শুকর নানা প্রজাতির সরীসৃপসহ প্রায় ৩০ প্রজাতির বন্য প্রাণী। বনে আছে অন্তত ৩৫ প্রজাতির পাখিসহ নানা প্রানীকূল। হরেক রকমের পাখ-পাখালির কলকাকলিতে মুখর চারপাশ। এ বনের সৌন্দর্যকে আরো আকর্ষণীয় করেছে লালদিয়া, বিহঙ্গ দ্বীপ ও দ্বীপের সৈকত।

পাথরঘাটা বন বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, ১৯৬৭ সাল থেকে বনবিভাগ এর সম্প্রসারণে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে হরিনঘাটা বনসৃজন শুরু হয়। পরবর্তীতে সাগর তীর ও মোহনায় দুটি চর জেগে নতুন বন সৃষ্টি হয়েছে। এ চর দুটিকে লালদিয়া বন ও বিহঙ্গ দ্বীপ নামে নামকরণ করা হয়েছে। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৬হাজার একর জুড়ে দৃষ্টিনন্দন এ বনে প্রাকৃতিক কেওড়া, গেওয়াসহ সৃজিত সুন্দরী ও ঝাউবন রয়েছে। এ বনাঞ্চলের পরিধি দিনে দিনে বেড়েই চলছে।

২০১৫ সালে সংরক্ষিত এই বনাঞ্চলকে ইকো ট্রুরিজম হিসেবে গড়ে তুলতে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় জলবায়ু ট্রাস্টের তহবিলের আওতায় বন ও সাগরের বিশাল জলরাশি দর্শনের লক্ষ্যে দর্শনার্থীদের চলাচলের জন্য (বনের ভেতর পায়ে চলার সেতু পথ) ফুট ট্রেইল নির্মাণ করা হয়। ফুট ট্রেইল দিয়ে নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দে বনের ভেতরের প্রকৃতি ও সাগরের হাতছানি দর্শনের সুযোগ পাচ্ছেন প্রকৃতি প্রেমিরা। এ ছারাও বনের ভেতর বিশ্রামাগার ও গোলঘরসহ ৬০ ফুট মিটার উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে।

এ বনের সবেচেয়ে আকর্ষণীয় দিকগুলোর একটি হলো বনের ভেতর সর্পিলাকারে ছড়িয়ে থাকা ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১০-১২টি খাল। জোয়ারের সময় যখন খালগুলো পানিতে পরিপূর্ণ থাকে তখন ছোট ছোট নৌকায় করে উপভোগ করা যায় বনের মধ্যকার সবুজের সমারোহ। প্রকৃতির এই লীলায় সাজানো হরিণঘাটার বনে কর্মব্যস্ত মানুষেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে আসেন একটু বিনোদনের জন্য। এই পর্যটন কেন্দ্রটিকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী বুনছে স্বপ্নের জাল। পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য দ্রুত লালদিয়া সেতু, রাস্তাঘাট, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও উন্নয়নের দাবি এলাকাবাসী ও পর্যটকদের।

দক্ষিনাঞ্চলে ইকো-ট্রুরিজম নিয়ে কাজ করেন উদ্যোক্তা আরিফুর রহমান উপকূল বার্তা’কে বলেন, ইকো-ট্রুরিজম সম্পদে ভরপুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি দক্ষিণাঞ্চল। এ খাতে রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা, শুধু প্রয়োজন যথাযথ পরিকল্পনার। বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবস্থিত হরিনঘাটা,লালদিয়া ও বিহঙ্গ দ্বীপ উপকূলের শান্ত ও নীল জলরাশি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইকো-ট্যুরিজমের সম্ভাবনা উন্মোচনের লক্ষ্যে সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত ও যৌথ পরিকল্পনা গ্রহণ করা আবশ্যক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংশ্লিষ্ট

Back to top button