লীড নিউজ

তোফাজ্জলকে হত্যার আগে পরিবারের কাছে চাওয়া হয়েছিল ২ লাখ টাকা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে মাসুদ কামাল তোফাজ্জল (৩০) নামে এক যুবককে আটক করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের শিকার যুবকের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের তালুকের চরদুয়ানী গ্রামে। ওই এলাকার মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, তোফাজ্জল পিরোজপুর সরকারী সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেন। ছাত্রজীবনে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। ২০১১ সালে তোফাজ্জলের বাবা আব্দুর রহমান সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান, ২০১৩ সালে মা বিউটি বেগম লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান, একমাত্র বড় ভাই নাসির পুলিশে চাকরী করতেন। ২০২৩ সালে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনিও মারা যান। পরিবারে রয়েছেন একমাত্র বড় ভাইর স্ত্রী ও তার দুই সন্তান।

খোজ নিয়ে জানা যায়, তোফাজ্জল তার এলাকার একটি মেয়েকে ভিষন পছন্দ করতেন। মেয়ের পরিবার ওই মেয়েকে অনত্র বিয়ে দেয়ার পর তোফাজ্জল ২০২০ সালে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। পরিবারের কেউ না থাকায় পরিবার ও অভিভাবকহীন হয়ে রাস্তায়-রাস্তায় ঘুরতেন তিনি। ক্ষুধার প্রয়োজনে মানুষের কাছ থেকে চেয়ে খেতেন।

বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোন চোর সন্দেহে ওই ব্যক্তিকে ফজলুল হক হলের অতিথিকক্ষে ধরে এনে মারধর করা হয়। ওই ব্যক্তিকে হলের ক্যানটিনে রাতের খাবার খাইয়ে আবারও মারধর করেন অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা। হত্যার আগে তোফাজ্জলের বড় ভাইর স্ত্রীর মুঠোফোনে কল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে একজন বলেন, তোফাজ্জল মোবাইল চুরি করেছে, ওকে বেধে রাখা রয়েছে। ওকে ছাড়িয়ে নিতে দুই লক্ষ টাকা পাঠাতে হবে। সকালবেলা বড় ভাইর স্ত্রী জানতে পারেন তার দেবরকে হত্যা করা হয়েছে।

তোফাজ্জলের প্রতিবেশী লিটন তালুকদার উপকূল বার্তা’কে বলেন, তোফাজ্জল একজন মেধাবী ছাত্র, কয়েক বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় রয়েছেন। পরিবারের কেই না থাকায় ওর চিকিৎসা করানো হয়নি। মানুষের কাছে হাত পেতে খেতেন। এলাকায় চুরি বা অন্য কোন খারাপ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। ওর হত্যার খবর শুনে আমরা শোকাহত। এ হত্যার সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করছি।

মাসুদ কামাল তোফাজ্জলের বড় ভাইর স্ত্রী শরিফা আক্তার উপকূল বার্তা’কে বলেন, মাসুদ কামাল তোফাজ্জল ২০২০ সাল থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন, ও চোর নয়। পরিবারের কেই না থাকায় ওর চিকিৎসা করানো যায়নি। একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সব সময় এলাকাতেই থাকতেন। হটাৎ গতকাল রাতে আমার ফোনে দুটি নম্বর দিয়ে কল দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয় দিয়ে বলেন, তোফাজ্জল মোবাইল চুরি করেছে, ওকে আটকে রাখা হয়েছে। ছাড়িয়ে নিতে দুই লক্ষ টাকা পাঠাতে হবে। পরে আমি ওর আত্মীয় স্বজনকে জানাই। সকালে জানতে পারি ওকে হত্যা করা হয়েছে। আমার দেবর তোফাজ্জল হত্যার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংশ্লিষ্ট

Back to top button