দেশের মানুষ যেন আতঙ্করাজ্যের বাসিন্দা বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের। আজ সোমবার দেওয়া এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন তিনি। এ ছাড়া বিবৃতিতে ডিবি হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় নেতা মো. নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, মো. আবু বাকের, আসিফ মাহমুদ ও নুসরাত তাবাসসুমের মুক্তি চেয়েছেন জাপা চেয়ারম্যান।
বিবৃতিতে জি এম কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্র, এখানে দেশের মালিক জনগণ। দেশের সব ক্ষমতার মালিকও জনগণ। সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা বা প্রতিবাদ করার অধিকার প্রতিটি নাগরিকের আছে। অহিংস প্রতিবাদকে রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে বিবেচনা করার বা সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রাষ্ট্রীয় আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ব্যবহার করে সংহিসভাবে মোকাবিলা করার অধিকার সরকার বা সরকারি দলের নেই। সে কারণে শুধু ছাত্র আন্দোলন নয়, কোনো আন্দোলন দমাতেই আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য গুলি করতে পারে না।’
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘নিরাপত্তা হেফাজতের নামে বেশ কয়েকদিন ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ জন সমন্বয়ককে ডিবি অফিসে আটকে রাখা হয়েছে। তাদের পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করতে দেওয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি, এ জন্য স্বজনদের মাঝে মারাত্মক উৎকন্ঠা বিরাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘আবার, ডিবি হেফাজতে থেকেই আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে তারা। এদিকে, সাধারণ ছাত্ররা মনে করছে, গোয়েন্দা সংস্থা বলপূর্বক এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তাদের বাধ্য করছে। এ কারণে সাধারণ ছাত্ররা আটক সমন্বয়কদের সেই ঘোষণা প্রত্যাখান করেছে। দিনের পর দিন সাধারণ ছাত্রদের নিরাপত্তার নামে তাদের ও তাদের পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আটকে রাখাকে আমরা আইনসম্মত মনে করি না।’
জি এম কাদের বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করতে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়েছে। হেলিকপ্টার এবং বহুতল বিশিষ্ট বাড়ির ছাদের ওপর থেকে এবং ভ্রাম্যমাণ গাড়ি থেকে জনগণের ওপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করা হয়েছে। যে কারণে, বাবা-মায়ের কোলের মধ্যে ও ঘরের মাঝে খেলারত অবস্থায় শিশু নিহত হয়েছে। আবার, ঘরের ভেতরে কাজ করতে করতে গুলিবিদ্ধ হয়ে গৃহিণী নিহত হয়েছেন বলেও গণমাধ্যমে এসেছে। একইভাবে অসংখ্য নিরিহ পথচারী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন হলো, এই ধরনের গুলি বর্ষনের উদ্দেশ্য কী ছিল? সন্ত্রাসীদের নির্মূল করা যদি লক্ষ্য হয়, তাহলে এই ধরনের প্রক্রিয়ায় কি সন্ত্রাসী চিহ্নিত করা সম্ভব ছিল? বাবার কোলে শিশু, রান্নাঘরে গৃহিণী ও নিরিহ পথচারী, তারা কি সন্ত্রাসী? এই মৃত্যুর দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।’
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আন্দোলন দমাতে দেদারছে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, গ্রেপ্তার বাণিজ্য চালাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। সাধারণ মানুষের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে। দেশের মানুষ যেন আতঙ্করাজ্যের বাসিন্দা। প্রতিটি আহত, নিহত এবং সহিংসতার নিরপেক্ষ তদন্তসাপেক্ষে আমরা বিচার চাচ্ছি।’